ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে এবার নতুন ষড়যন্ত্র!

ছবি: ফাইল ফটো
ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করতে একের পর এক কূট চাল ব্যর্থ হওয়ায় এবার দৃশ্যপটে নতুন ষড়যন্ত্র। এবারও চক্রান্তের নেপথ্য কারিগর দখলদার ইসরাইলের পরম মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সরানো হবে অন্তত ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে। আশ্রয় হবে উত্তর আফ্রিকার কোনো দেশে।
তোলপাড় ফেলে দেয়া চরম উদ্বেগজনক মহাপরিকল্পনাটি ফাঁস করেছে মার্কিন গণমাধ্যম এনবিসি নিউজ। বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর সাথে সরাসরি কাজ করা দু’জন আর সাবেক মার্কিন কর্মকর্তাসহ অন্তত ৫ জন এবিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। তারা নিশ্চিত করেছেন লিবিয়া সরকারের সাথে এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সেরেছেন। আলোচনার গুরুত্ব বিশ্লেষণে দাবি করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে গাজা থেকে উত্তর আফ্রিকার লিবিয়াতে নেওয়ারই ফন্দি আঁটছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে রাজি করানোর জন্য ব্যবহার করা কিছু টোপের তালিকাও ফাঁস করে দিয়েছে এনবিসি নিউজ।
ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের রুঢ় বাস্তবতার শুরুটা ১৯৪৮ সালে। ১৯১৭ সালে তুর্কি সেনাদের হটিয়ে জেরুজালেম দখলে নেওয়া ব্রিটিশ সেনারা প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করে ১৯৪৮ এর ১৪ মে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করে আর তুষের আগুন জ্বালিয়ে সটকে পড়ে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের ৫৫ শতাংশে ইহুদিরা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করায় নিজ ভূমিতেই বহিরাগত হয়ে পড়েন ভাগ্যবঞ্চিত ফিলিস্তিনিরা। এরপর দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিরা যে শুধু পূর্ব পুরুষদের ভিটেবাড়ি আর জমি হারিয়েছেন এমন নয়; চোখের সামনে খুন হতে দেখেছেন বাবা-মা-সন্তান-নাতী-নাতনীসহ প্রতিবেশি আর স্বজনদের। এর শেষ হওয়া তো দূরের কথা; দখলদারিত্বের থাবায় এবার গাজা থেকেও ফিলিস্তিনিদের নাম নিশানা মোছার চক্রান্ত চলছে।
এনবিসি’র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিনিময়ে ট্রাম্প প্রশাসন লিবিয়াকে শত কোটি ডলারের তহবিল ছাড় দেবে, যেসব অর্থ এক দশকেরও আগে জব্দ করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি বিনামূল্যে আবাসন ও বৃত্তির মতো প্রণোদনাও যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় আছে। এসব দেন দরবারের বিষয় ইসরাইলকেও অবহিত করা হয়েছে। এবিষয়ে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাথে যোগাযোগ করা হলে এমন মহাপরিকল্পনার তথ্য অসত্য বলে উড়িয়ে দিলেও সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র রুখতে প্রস্তুত থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী-হামাস। সংগঠনটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের শিকড় মাতৃভূমির খুব গভীরভাবে প্রোথিত। মাতৃভূমির প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ফিলিস্তিনিরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে এবং যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেও গাজা পুনর্গঠন করে পর্যটকবান্ধব বিনোদনের শহরে রূপ দেওয়ার অজুহাতে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়েছেন ট্রাম্প। তাই এবার নয়া মোড়কে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে উচ্ছেদের অলীক পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। ঘুরে ফিরে আসছে এর বাস্তবায়নের পথে মূল বাধাগুলো। লিবিয়ায় ফিলিস্তিনিদের কোথায় পুনর্বাসিত করা হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে আকাশ, স্থল বা সমুদ্রপথে পরিবহন পদ্ধতিও বেশ জটিল। মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর ১৪ বছরেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলায় স্থিতিশীলতা ফেরেনি লিবিয়ায়।
পরিস্থিতি এমন যে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের একটি ব্যাচ লিবিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সার্বিক বিচারে এই মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন অনেক কঠিন মনে হলেও গত সপ্তাহে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে আরব নেতাদের হাত করতে বাণিজ্য চুক্তির টোপ ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা যে দীর্ঘায়িত করবে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: