দুর্ঘটনার পর যে কারণে খোঁজা হয় বিমানের ব্ল্যাক বক্স

ছবি: ফাইল ফটো
বিশ্বের যেকোন স্থানে বিমান দুর্ঘটনার পর বিশেষজ্ঞ তো বটেই; সচেতন সাধারণ মানুষের আলাপচারিতায় ঘুরে ফিরে উঠে আসে ব্ল্যাক বক্স প্রসঙ্গ। জোর দেওয়া হয় বিমানের ব্ল্যাক বক্স উদ্ধারের দিকে। দুর্ঘটনার রহস্য উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তেও মূল ভূমিকা রাখে বিশেষ এই যন্ত্রটি। ব্ল্যাক বক্স কি? দুর্ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কীভাবে কাজ করে এটি?
যুদ্ধ বিমান হোক বা যাত্রীবাহী; দুর্ঘটনার পর প্রাণহানির মতো অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতির শোক কিছুটা সামলে ওঠার পরই শুরু হয় অঘটনের কারণ খোঁজার তোরজোড়। দুর্ঘটনার দোষ চাপানোর প্রবণতা আর গুঞ্জন-গুজবের ডালপালা বিস্তারের পথ বন্ধ করতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের দিক নির্দেশকের ভূমিকা রাখে বিমানের বিশেষ এক যন্ত্র। যা ব্ল্যাক বক্স নামে পরিচিত। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও গত কয়েক মাসে দেশে দেশে বিমান দুর্ঘটনার পর আবার আলোচনায় বিমানের বিশেষ এই যন্ত্রটি। কী এই ব্ল্যাক বক্স? কেন বিমান দুর্ঘটনার পর সামর্থের সবটুকু দিয়ে এটি উদ্ধারের কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়েন তদন্তকারীরা?
নামে ব্ল্যাক বক্স হলেও এর রং কিন্তু কালো নয়। প্রতিফলক ফিতা বা রিফ্লেক্টিভ টেপ এর গায়ে জড়ানো থাকে। যা আলোতে জ্বলজ্বল করে; প্রতিফলিত হয়। দুর্ঘটনার পর সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্যেই এমন ব্যবস্থা। আর ব্ল্যাক বক্সের সাথে বক্সের কোনো সম্পর্ক নেই। এর কাঠামোতে একটি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। যেখানে থাকে মেমোরি ইউনিট। সিলিন্ডারের পাশের কাঠামোতে থাকে ব্যাটারি।
ব্ল্যাক বক্সে ফ্লাইটের যাবতীয় তথ্য এবং ককপিটে থাকা পাইলট, কো-পাইলট আর অন্যদের কথোপকথন স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হয়। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার-এফডিআর ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার-সিভিআর—এ দুটি ব্ল্যাক বক্স থাকে বিমানের পেছনে। পাইলটদের হেডসেট ও ককপিটের মাঝামাঝি স্থানে থাকে প্রায় চারটি মাইক্রোফোন। যা কথোপকথনের রেকর্ড ব্ল্যাক বক্সে জমা করে। এতে কোনো দুর্ঘটনার পর ব্ল্যাক বক্সের বিভিন্ন তথ্য থেকে শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি জানা যায়। এভাবে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের মাধ্যমে ওই ধরনের বিপর্যয় এড়ানোর কৌশল বের করা আর সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়। প্রায় ২৫ ঘণ্টা ধরে কথোপকথনসহ বিভিন্ন ধরনের কারিগরি তথ্য রেকর্ড করতে পারে এটি। ব্ল্যাক বক্স বিদ্যুৎ ছাড়া ৩০দিন কাজ করতে পারে। এটি কোথাও হারিয়ে গেলে প্রায় ৩০দিন ধরে ভাইব্রেশনের সঙ্গে জোরে আওয়াজ করে। ব্ল্যাক বক্স সমুদ্র পৃষ্ঠের ১৪ হাজার ফুট গভীর থেকে তরঙ্গ নির্গত করতে পারে। এতে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার দূর থেকে এই তরঙ্গ শনাক্ত করা যায়।
রাইট ব্রাদার্স প্রথমে বিমানের পাখার ঘূর্ণন সম্পর্কিত রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে উন্নত ব্ল্যাক বক্সের প্রচলন হয়। যন্ত্রটি সুরক্ষিত রাখতে সাধারণত বিমানের পিছনের দিকে রাখা হয়। যা টাইটানিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি; টাইটানিয়ামের বাক্সে আবদ্ধ থাকে। এজন্য ব্ল্যাক বক্স আগুন, পানি, চাপ, তাপ বা আঘাতে সহজে নষ্ট হয় না। বক্সটি এক ঘণ্টার জন্য প্রায় ১১ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা আর ১০ ঘণ্টার জন্য ২৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। তাই দুর্ঘটনায় বিমান ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলে, আগুনে পুড়লে, পানিতে ডুবে গেলেও ব্ল্যাক বক্স থাকে অক্ষত।
বিভি/এমআর
মন্তব্য করুন: